আজ বুধবার, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তায় ভাটা !

ভাটা

শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তায় ভাটা ! ভাটা

সংবাদচর্চা ডেস্ক: নারায়নগঞ্জ ৪আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের জনপ্রিতায় ভাটা পড়তে শুরু করছে। সাত খুনের ঘটনা ও তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের পর বর্তমানে সবচেয়ে উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন।  নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মাইনর স্ট্রোক করে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

মেয়রের এই অসুস্থতার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয় শহরে। এরই মধ্যে শহরবাসী বলতে শুরু করে, শামিম ওসমান রাজনৈতিকভাবেই আইসিওতে আছেন!

এদিকে, মঙ্গলবারের ঘটনায় আইভী শামীম উভয়ের প্রতিই অসন্তোস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন দোষী যেই হোক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিও নির্দেশনা রয়েছে।

১৬ জানুয়ারীর ঘটনার পর প্রয়োজনে শামীম ওসমানকে দল থেকে বহিস্কার করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে, আইভী সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসার পর দল থেকে এ ঘটনার নির্দেশনা কি দেয়া হয় এবং দল কিভাবে আইভীর মূল্যায়ণ করে এর দিকেও তাকিয়ে আছে নগরবাসী।

এই আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে শামীম ওসমান বিভিন্ন সময় তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ব্যবহার করেছেন। মেয়র ও রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে নানান সময় নানান মহলকে উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। তবে বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। যতবারই তিনি সন্ত্রাসের সাহায্য নিয়েছেন ততবারই আরো বেশি বিতর্কিত হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা হয়েছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনের সঙ্গে তার ফোনালাপ প্রকাশ হওয়ার পর শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তায় আরো বেশি ভাটা পরে।

তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি সচেতন মহল বলছে, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বির সন্তান তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের পর রাজনৈতিক ভাবে বেকায়দায় পরে যায় ওসমান পরিবারের রাজনীতি। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে মেয়র আইভীসহ মাঠে নামেন নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে চলছে সেই আন্দোলন।

তার আগে রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে হেফাজতকে ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের হেফাজত নেতা। বলেছিলেন, হেফাজত ও শামিম ওসমানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই এবং ৫ মে’র ঘটনার সঙ্গেও হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই। শামিম ওসমানের সেই বক্তব্যের পর সারাদেশে সমালোচনার শিকার হন শামিম ওসমান।

তাছাড়াও মেয়র আইভীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাঁধা দিয়ে আরো বেশি সমালোচিত হয়েছেন। এই সময়ে মেয়র আইভী যতটা নারায়ণগঞ্জের সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছেছেন ঠিক ততটাই জনপ্রিয়তা হারিয়ে নিস্ব হয়েছেন শামিম ওসমান।

তাদের মতে, জনপ্রিয়তা হারানো শামিম ওসমান তার সন্ত্রাসী বাহিনীর উপর নির্ভর করেই বর্তমানে টিকে আছেন। কেননা এক সময়ের তার সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক সহচররা শামীম ওসমানের সন্ত্রাস, জনবিচ্ছিন্নতা ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিতে ত্যাক্ত হয়ে তার সঙ্গ ছেড়েছেন। কেউ কেউ চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়গুলোতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সমগ্র ওসমান পরিবারের প্রভাব একবারেই শূণ্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে।

বিগত সময়ে শামিম ওসমানের জনপ্রিয়তা হানির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও তার প্রভাব কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার তাকে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করার পর জাতীয় সংসদেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর উস্মার শিকার হয়েছেন।

তারা বলছেন, সর্বশেষ হকার ইস্যুতে মঙ্গলবার শামিম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবের পর রাজনৈতিকভাবে কোমায় চলে গেছেন নারায়ণগঞ্জের এই প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা। তার ব্যাক্তিগত বিরোধের কারনে হকারদের ব্যবহার করেছেন নিজের রাজনৈতিক ফায়দা লুটের জন্য।

সেদিন তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেয়র আইভীকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যকলাপ স্পষ্ট। শামীম ওসমান আরো বেকায়দায় পড়েছেন সন্ত্রাসী নিয়াজুলের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে। যেখানে স্পষ্টভাবে তিনি আগের দিন ঘোষণা দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীসহ মাঠে ছিলেন সেখানে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে কেন্দ্রের বিরাগ ভাজন হয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবারে করা শামীম ওসমানের মস্ত ভুল ঢাকতে বুধবার ঘটনার বর্ননা দিতে রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সকল গণমাধ্যম কর্মীর সামনেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন। দুটি নির্বাচন নিয়েই বলেন, কোথায়, কিভাবে কোন স্টাইলে আইভীকে পাশ করানো হয়েছে তিনি সব কিছুই জানেন। সময় হলেই এসব বলবেন।

নিজের এক ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে শামীম ওসমান আরকটি মস্ত বড় ভুল করে বসেছেন। তার এই মন্তব্যের পর আওয়ামীলীগ যেমন বিতর্কিত হয়েছে তেমনি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার বিএনপির দাবি আরো বেশি জোড়ালো হয়েছে। নিজের পিঠ বাঁচাতে বিপদে ফেলেছেন দলকে।

একদিকে নিজের জনপ্রিয়তা শূণ্যের কোঠায় নেমে আসা। অপরদিকে দেশ বিদেশে গডফাদার তকমা পাওয়া শামীম ওসমানের নিজ বলয় ভেঙ্গে যাওয়া ও দলের মধ্যে গ্রহন যোগ্যতা হারিয়ে রাজনৈতিকভাবে আইসিওতে চলে গিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের গডফাদার সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। এখন দেখার পালা আইসিও থেকে ফিরে আসতে পারেন কি না শামীম ওসমান।

 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ